একদিন দুপুরে অফিস যাচ্ছিলাম। কতগুলো বাস তখন শুধু শ্যাওড়াপাড়া থেকে কারওয়ান কাজার যেত, সেগুলোতে। তো ফার্মগেট পৌঁছার পরই একই রকম আরেকটা বাসের সাথে আমাদের বাস পাল্লা দিতে শুরু করলো, শুরু হলো একে অন্যকে ঠোকাঠুকি। কয়েকজন যাত্রী রেস খেলার মতো চালককে উৎসাহ দিচ্ছেন। আমি তো ভয়ে আধমরা। চালককে বললাম, মামা আস্তে চালান। বাসে তো অসুস্থ মানুষ থাকতে পারে। তখন সেই উৎসাহী যাত্রীদের একজন বললেন, ‘অসুস্থ হলে বাসে উঠসে ক্যান? সিএনজিতে যাবে। ওই তুই চালা, জোরে চালা।’ এসময় তাদের সাথে আমার বেশ কথা কাটাকাটি হয়। যাত্রীদের একজন আমাকে ‘চোদানি মাগী’ বলে সম্বোধন করেন। কারণ আমি, মেয়ে মানুষ হয়ে বেশি কথা বলছি।
উৎসাহ পেয়ে চালক তুমুল বেগে ঠোকাঠুকি শুরু করলেন। এক পর্যায়ে কারওয়ান বাজার আসে। আমি নামার জন্য সিট থেকে উঠে দাঁড়াই। আমাকে দাঁড়াতে দেখতেই চালক জোরে একটা ব্রেক কষেন, যেন আমি পড়ে যাই। এটা আমি নিশ্চিত হয়ে বলছি, কারণ চালকের সামনের কাঁচে আমি দেখেছি, তিনি আমাকে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিচ্ছিলেন।
কিন্তু আমি পড়িনি, কারণ প্রতিটি পা তখন আমি সাবধানে ফেলি। আমার ভেতর তখন ছোট্ট একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে। যাকে বাঁচাবো বলে পণ করেছি আমি। সামান্য বাস চালকের কী ক্ষমতা যে আমার ক্ষতি করে?
তখন এনটিভি অনলাইনে কাজ করি। আমি অন্তঃসত্ত্বা এটা জানার পর অনলাইনের চীফ ফকরউদ্দীন জুয়েল ভাইয়া আমাকে ডেকে বললেন, আমি যেন সুবিধামতো সময়ে অফিস নিই। যেহেতু আমাদের তিনটা শিফট ছিল, আমি যে কোনো শিফট বেছে নিতে পারবো।
সবদিক বিবেচনায় দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টার শিফট নিলাম। এতে সুবিধা হলো, ১০টার পর বাসা থেকে বের হতে পারবো, সকালে তাড়াহুড়া লাগবে না, ঘুম হবে আর তখন বাসও তুলনামূলক ফাঁকা থাকবে। এছাড়া রাত ৮টা ৪০ মিনিটে অফিসের ড্রপের গাড়িও ছাড়ে।
পুরো নয় মাসে আমি একদিন কেবল অফিসে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, সেদিন হোমায়রা আমাকে ওদের গাড়িতে বাসায় দিয়ে গিয়েছিল। এছাড়া একদম নিয়মিত অফিস করেছি। তবে সেই সময়ের সহকর্ম ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়, তারা আমাকে আলাদা মানসিক কোনো চাপ দেননি। বীভৎস দুর্ঘটনা, ধর্ষণ, ভয়াবহ খুনের ঘটনার কোনো নিউজ আমাকে করতে দেননি। যেদিন শরীরটা একটু খারাপ লাগত বা ক্লান্ত লাগত সেদিন আগেই বলে নিতাম যে আজ হয়ত একটু কাজ স্লো হবে। এছাড়া অন্যরা যেমন কাজ করেছে, আমিও তেমন করেছি।
কারণ, কোনোদিনই চাইনি যে, নারী হিসেবে বেশি সুবিধা নিচ্ছি-এমন অভিযোগের তীর আমার দিকে ওঠে। তবু চারমাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে দুই একজন বাঁকা কথা শুনিয়েছেন। কত আরাম আমাদের, চারমাস কাজ না করেই বেতন পাবো!
সে যাই হোক, গর্ভাবস্থায় অফিসের খাওয়া খেয়েছি। দুপুরে খাওয়া আসলে প্রথম ব্যাচে যারা খেতে বসতেন আমাকে ডেকে নিতেন। হোমায়রা, তনয়া বাসা থেকে আমার জন্য মাঝে মাঝে টুকটাক খাবার নিয়ে আসতো।
আরেকটা ছিল, সিঙ্গারা খাওয়ার নেশা। রোজ দুপুরে মনে হতো সিঙ্গারা না খেলে মরে যাবো। হুমু আর তনয়াকে সঙ্গী করে চলে যেতাম ইটিভির চিপায়। সেখানে ভ্যানের ওপর সিঙ্গারা ভাজতো। গরম গরম খেয়ে আবার কাজে ফিরতাম।
মজার কথা হলো, সুজন চাইতো না আমি বাইরের কিছু খাই। পেট খারাপ বা জন্ডিস হতে পারে। তাই ওকে বলতাম না, চুপচাপ খেতে চাইতাম। কিন্তু যখনই নিচে নামতাম, তখনই ও ফোন করতো। আর আমাকে বলে দিতে হতো যে সিঙ্গারা খেতে নিচে নেমেছি। তখন কিছুটা বকাঝকা করে ও ফোন রাখত। আমি এখনো বুঝি না, যথাযথ সময়েই ও কীভাবে ফোন করত!
আজকে এটুকুই। অফিসের কাজ আছে হাতে।
আগের দুটো পর্ব এখানে: https://tinyurl.com/y2e9n969
https://tinyurl.com/y6p9k66x